শেয়ার বাজারে ধস নামা খুবই স্বাভাবিক একটা ব্যাপার। যে কোন সময় শেয়ার বাজারে ধস নামতে পারে তাই বলে আত্মবিশ্বাস হারালে চলবে না আমাদেরকে আগে থেকে প্রস্তুতি নিয়ে এগোতে হবে তাহলে আমরা খুব সহজেই এই ধস নামার মোকাবেলা করতে পারব। আমরা যারা শেয়ার বাজারে বিনিয়োগ করি শেয়ার বাজারে যখন ধ্বস নামে তখন আমাদের পোর্টফোলিওর ভ্যালু অনেকটা কমে যেতে দেখি এবং আমরা ভয় করে অনেক ভুল সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলি এবং তার ফলে আমরা প্রচুর টাকা লস করে ফেলি এই শেয়ার বাজার থেকে। তাই আমাদের সব সময় প্রস্তুত থাকতে হবে কিভাবে এই শেয়ার বাজারের ধসের মোকাবেলা করব।
আজ আমি আপনাদেরকে পাঁচটি নিয়মের কথা বলব এই পাঁচটি নিয়ম ফলো করলে আমরা এই শেয়ার বাজারে ধসের হাত থেকে বাঁচতে পারব এবং এই ধস নামার সুযোগে আমরা এই বাজার থেকে প্রচুর টাকা উপার্জন করতে পারব।
যখন শেয়ার মার্কেটে বা শেয়ার বাজারে যখন ধস নামে তখন যেহেতু সমস্ত কোম্পানির শেয়ার খুব তাড়াতাড়ি নিচে নামতে শুরু করে তখন আমরা বেশিরভাগ সময় ভুল সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলি। তখন চিন্তা করি এই সময় কোন কোম্পানিগুলো ভালো কোন কোম্পানিগুলো খারাপ কোনটা কিনব কোনটা বিক্রি করব। বিভিন্ন রকম চিন্তার মাঝখানে পড়ে আমরা অনেক বড় বড় ভুল সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলি।
এবার তাহলে আসুন জেনে নিই কোন পাঁচটি নিয়ম মেনে চললে আমরা এই কঠিন পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে পারব।
নিজের পোর্টফোলিও থেকে এমন কোন শেয়ার বিক্রি করবেন না যার দাম শুধুমাত্র কমেছে বলে।
শেয়ার বাজারের গোল্ডেন রুলস হল যখন শেয়ারের দাম কমবে তখন কিনব আর যখন শেয়ারের দাম বাড়বে তখন বিক্রি করব। কিন্তু আমরা তার উল্টোটাই করে থাকি । যখন শেয়ার বাজারে ধস নামে তখন আমরা দেখি প্রত্যেকটা শেয়ারের দাম খুব তাড়াতাড়ি নিচের দিকে নেমে যায়। এবং আমরা দেখি আমাদের পোর্টফলিও ধীরে ধীরে নিচের দিকে চলে যাচ্ছে এবং প্রচুর টাকা আমরা লসের মধ্যে চলে যাচ্ছি। তখন আমাদের মনের মধ্যে ভয়ের সৃষ্টি হয় এবং আমরা সেই ভয় থেকে বেরিয়ে আসতে চেষ্টা করি কম লোকসানে বা কম লসে আমাদের শেয়ার বিক্রি করে বেরিয়ে আসতে যাতে আমরা আরো অনেক বেশি লসের হাত থেকে রক্ষা পাই। এটাই হচ্ছে শেয়ার বাজারের সবথেকে বড় ভুল সিদ্ধান্ত গুলির মধ্যে একটি।
শেয়ার বাজারে একটা কথা মনে রাখবেন আমরা যতক্ষণ পর্যন্ত শেয়ার বিক্রি না করি ততক্ষণ পর্যন্ত কিন্তু আমরা লস করি না আমরা শুধুমাত্র লস করি যখন আমরা সেই শেয়ার বিক্রি করি। তাই শুধুমাত্র দাম কমছে বলে কোন শেয়ার বিক্রি করলে হবে না শেয়ার বাজারে যখন ধস নামে তখন অনেক ভালো ভালো কোম্পানির শেয়ারও লস এর মধ্যে চলে যায়। তাই আমাদেরকে এই সময়টা একটু ধৈর্য ধরে সেই শেয়ারগুলোকে ধরে রাখতে হবে বিক্রি না করে। তাহলেই আমরা এই শেয়ারগুলো থেকে ভালো পরিমান রিটার্ন পেতে পারি।
শেয়ার কেনার সময় অবশ্যই সেই শেয়ারের ফান্ডামেন্টাল অ্যানালিসিস ভালোভাবে করতে হবে।
যখনি শেয়ার কিনবেন অবশ্যই ভালো করে ফান্ডামেন্টাল অ্যানালিসিস করে কিনবেন, যদি কিনে থাকেন তাহলে চিন্তা করার কিছু নেই।
উদাহরণস্বরূপ আমরা এইচডিএফসি ব্যাংকের উদাহরণ নিতে পারি বা এইচডিএফসি ব্যাংকের শেয়ারের উদাহরণ দিতে পারি। কোম্পানির শেয়ারের দাম যদি দুই থেকে তিন শতাংশ কমে যায় তাহলে কি এইচডিএফসির ব্যবসার কোন ক্ষতি হবে? ওদের ব্যবসা ওদের মতোই চলবে। আমরা বোকার মতো প্যানিক করে এই ভালো ভালো কোম্পানিগুলোর শেয়ার বিক্রি করে ফেলি এবং লস করে ফেলি শেয়ার বাজারে।
তাই কোন শেয়ার কেনার আগে সেই শেয়ারের ভালোভাবে ফান্ডামেন্টাল অন্যালিসিস করুন এবং নিজের মনে প্রশ্ন করুন, এই শেয়ারটা কি ফান্ডামেন্টালি শক্তিশালী আছে, এদের ব্যবসা কি উন্নতমানের, কম্পিটিটারের থেকে এই কোম্পানি কতটা এগিয়ে। এই প্রশ্নগুলো আপনার মাথার মধ্যে রাখতে হবে। তাহলে আপনি একটা ভালো কোম্পানি বাছাই করতে পারবেন।
আপনি যদি টিভি বা কোন ইউটিউবারের ভিডিও দেখে শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ করেন তাহলে আপনার লস হবার সম্ভাবনা কিন্তু অনেক বেশি, কারণ আমরা এই সমস্ত জায়গা থেকে কোন শেয়ারের নাম শুনে হঠাৎ করেই বিনিয়োগ করে ফেলি। তাই এটা করার আগে অবশ্যই সেই কোম্পানির সম্পর্কে ভালোভাবে রিসার্চ করতে হবে। তারপরে আমাদের প্রচুর পরিশ্রম করে উপার্জন করা টাকা সেই কোম্পানির শেয়ারে বিনিয়োগ করতে হবে।
সুযোগটা ব্যবহার করতে হবে।
যখন শেয়ার বাজারে ধস নামে তখন অনেক ভালো ভালো কোম্পানির শেয়ার অনেক কম দামে পাওয়া যায়। অনেক সময় যখন bull মার্কেট থাকে তখন দাম বেশি হওয়ার কারণে আমরা এই শেয়ারগুলো কিনতে পারি না। এই সময় একটু বুদ্ধি করে বিনিয়োগ করতে পারলে ভালো পোর্টফোলিও গুছিয়ে করা যেতে পারে। যদি আপনার কোন কোম্পানির উপরে ভরসা না থাকে তাহলে এই সময় সেই শেয়ার বিক্রি করে ভালো কোম্পানির শেয়ার কিনে নিতে পারেন কারণ এই সময়ে অনেক ভালো ভালো কোম্পানির শেয়ার অনেক কম দামে পাওয়া যায়। এবং এই কোম্পানির শেয়ারগুলো ভবিষ্যতে ভালো পরিমাণ রিটার্ন দিতে সক্ষম হয়।
বেশি ঋণ নেওয়া কোম্পানিগুলোর থেকে দূরে থাকুন।
মানুষ হোক বা কোন কোম্পানি প্রত্যেকের কাছেই বেশি ঋণ তাদের ধ্বংসের কারণ হয়ে দাঁড়ায়। তাই কোনো কোম্পানিতে বিনিয়োগ করার আগে ভালো করে দেখে রাখুন যে সেই কোম্পানিতে ঋণ কত নেওয়া আছে। যদি বেশি হয় তাহলে সেই কোম্পানিতে বিনিয়োগ না করাই ভালো। এই বেয়ার মার্কেটের সময় এই সমস্ত কোম্পানিগুলোর অবস্থা আরো খারাপ হয়ে যায়।
কোম্পানির এই তথ্যগুলো আপনারা Finology , Screener এই সমস্ত ওয়েবসাইট থেকে পেয়ে যাবেন।
ভালো শেয়ার খোঁজার নিয়ম।
শেয়ার বাজারে লাখ টাকার প্রশ্ন হচ্ছে ভালো কোম্পানির শেয়ার আমরা খুঁজবো কি করে?
সব সময় এমন একটা কোম্পানি খুঁজুন যে কোম্পানির মার্কেটে কম্পিটিশন খুবই কম। এবং সেই কোম্পানির প্রোডাক্টের চাহিদা অনেক বেশি। উদাহরণস্বরূপ আমরা CDSL, Asian paints এই ধরনের কোম্পানিগুলিকে নিতে পারি। কারণ CDSL এর কোনো কম্পিটিশন নেই। অন্যান্য রঙের কোম্পানিগুলি Asian paints এর থেকে অনেক পিছিয়ে।
এমন অনেক সেক্টর আছে যেগুলোতে কম্পিটিশন খুবই কম এবং তাদের জিনিসের চাহিদাও অনেক বেশি এই কোম্পানিগুলিকে আমরা Screener এর ওয়েবসাইটে গিয়ে খুঁজে পেতে পারি।
তাই আমি বলব, শেয়ার বাজারে ধস নামলে পোর্টফোলিও লাল দেখে ভয় পেলে চলবে না আমাদেরকে একটা কথা মাথায় রাখতে হবে, এই সময় প্রত্যেকেরই পোর্টফোলিও লাল থাকে এবং এখানে তারাই এগিয়ে যেতে পারে যারা ভয় না পেয়ে বুদ্ধির সাথে সিদ্ধান্ত নিতে পারে। এই পাঁচটি নিয়ম মেনে চললেই আমার মনে হয় শেয়ার বাজারে ধস নামলে আমরা তার ভালোভাবে মোকাবেলা করতে পারব এবং এই সুযোগটা ভালোভাবে কাজে লাগাতে পারবো।