শেয়ার বাজার/ মার্কেট শব্দটার সাথে আমরা সবাই কমবেশি পরিচিত। আজ আমরা জানবো আসলে শেয়ার বাজার/মার্কেট কি? এবং কিভাবে কাজ করে?
শেয়ার বাজার/ মার্কেট কি?
ধরে নিলাম আপনি একটা ব্যবসা শুরু করলেন খুব সুন্দর চলতে শুরু করল আপনার ব্যবসা। এবার আপনার ব্যবসা বাড়ানোর জন্য এক লাখ টাকা লাগবে আপনি সেটা বাবা,আত্মীয় অথবা কোন বন্ধুর সাথে নিলেন।পরে আপনার ব্যবসার উন্নতির জন্য আরো এক কোটি টাকার প্রয়োজন হল। এবার আপনি কি করবেন?এত টাকা তো কেউ আপনাকে সহজে দেবে না। ব্যাংক থেকে লোন নিলে ব্যাংক সুদ নেবে মাসে মাসে। তখন আপনি চাইলেন এমন কেউ আপনাকে টাকাটা দেখ যে তার বদলে আপনার ব্যবসার লাভ হলে কিছু লাভের অংশ তাকে দেওয়া যায়। অন্তত লোকসান হলে তাকে যেন টাকা ফেরত দিতে না হয়।
এবার এটা আপনি কি করে পাবেন এই চাহিদার জন্যই মূলত শেয়ার বাজার তৈরি হয়েছে ভারতে NSE(National stock exchange) এবং BSE(Bombay stock exchange) মূলত এই দুটি বড় স্টক এক্সচেঞ্জ আছে এখানে সমস্ত বড় বড় কোম্পানি লিস্টেড আছে। এখানে আপনি পছন্দ মতো শেয়ার কেনাবেচা করতে পারেন। কোম্পানি আপনার টাকায় ব্যবসা করবে এবং লাভ হলে লাভের অংশ থেকে ডিভিডেন্ট হিসেবে দেবে অথবা না-ও দিতে পারে ভবিষ্যতে ব্যবসার উন্নতির জন্য। কোম্পানি যদি ব্যবসা ভালো করে অবশ্যই শেয়ারের দাম বাড়বে এতে আপনার লাভ হবে।
১. শেয়ার বাজারে/মার্কেটে ব্যবসা কেন করব?
বর্তমানে মূল্যবৃদ্ধি বা মুদ্রাস্ফীতির গড় ৬ থেকে ৭%। মানে আজকে আপনার ১০০ টাকায় যে জিনিসটা পাবেন এক বছর পর সেই জিনিসটাকে ১০৬ টাকা বা ১০৭ টাকায় কিনতে হবে। এবার ব্যাংকের সেভিংস একাউন্ট টাকা রাখলে ব্যাঙ্ক শুদ দেবে খুব বেশি হলে ৩.৫০ থেকে ৪ শতাংশ মানে আপনি যদি আজ ১০০ টাকা জমা করেন এক বছর পর আপনি পাবেন খুব বেশি হলে ১০৪ টাকা। তার মানে আপনি ব্যাংকে টাকা রেখে বছরে দু তিন টাকা লস করে চলেছেন। যদি ফিক্স ডিপোজিট করেন তাহলে হয়তো খুব বেশি হলে ৭% পেতে পারেন। তবুও আপনার লাভ কিছু থাকছেনা অন্যদিকে শেয়ার বাজারে আপনি অনায়াসে ১০ থেকে ১৫ শতাংশ রিটার্ন পেতে পারেন যদি আপনি একটু বুঝে সুুঝে টাকা বিনিয়োগ করেন। তার জন্য অবশ্যই একটু রিসার্চ করতে হবে। এবং লং টার্ম শেয়ার বাছাই করতে হবে। মনে রাখবেন খুব তাড়াতাড়ি টাকা লাভের চক্করে পড়বেন না আপনি অল্প কিছু সময় দিয়ে প্রচুর অর্থ উপার্জন করতে পারেন লংটার্ম বিনিয়োগ করলে শেয়ার মার্কেটে।
২. শেয়ার মার্কেটে ব্যবসা করতে গেলে কি কি প্রয়োজন?
শেয়ার বাজার বা শেয়ার মার্কেটে বিনিয়োগ করার জন্য প্রচুর পড়াশোনা করার কোন প্রয়োজন নেই আপনি শুধু যোগ-বিয়োগটা জানলেই হবে। সবার আগে আপনাকে একটা ডিমাট একাউন্ট খুলতে হবে। যার মাধ্যমে আপনি শেয়ার কেনাবেচা করতে পারবেন এবং একটা ট্রেডিং একাউন্ট লাগে যেটা একসাথে খুলে যায় ট্রেডিং একাউন্টে আপনি শেয়ার কেনাবেচা করবেন আর ডিমাট একাউন্টে আপনার শেয়ার সুরক্ষিত থাকবে। আপনি চাইলে পাঁচ মিনিটে ডিমাট একাউন্ট খুলতে পারেন অনলাইনে।
বর্তমানে অনেক ডিসকাউন্ট বোকার আছে যাদের মাধ্যমে এগুলি করা যায়। এগুলি হল Zerodha, Groww, Upstox, Angel one এইসব প্ব্রোকারের মাধ্যমে আপনি শেয়ার বাজারে বিনিয়োগ করতে পারেন। এছাড়াও অনেক ফুল সার্ভিস বোকারো রয়েছে যেমন Motilal Oswal, Sharekhan ইত্যাদি। তবে ডিসকাউন্ট ব্রোকারই সবথেকে ভালো শেয়ার মার্কেটে বিনিয়োগ করার ক্ষেত্রে। একাউন্ট খুলতে গেলে অবশ্যই আপনার যে যে জিনিসগুলো লাগবে সেগুলি হল।
১) একটা জিমেইল(Gmail) একাউন্ট।
২) একটা প্যান কার্ড।
৩) আধার কার্ড সংযুক্ত মোবাইল নাম্বার।
৪) সাদা কাগজের উপর একটা সই।
৫) একটা সেলফি।
কিছু কিছু ব্রোকার অ্যাকাউন্ট ওপেনিং এর সময় কিছু চার্জ নেয়। কিন্তু আপনি Groww তে ফ্রিতে একাউন্ট ওপেন করতে পারেন।
৩. শেয়ার মার্কেট থেকে কত পার্সেন্ট রিটার্ন আশা করতে পারি?
আমরা শেয়ার বাজার বা শেয়ার মার্কেটে এই আশায় আসি যে আজ যদি আমি ১ লাখ টাকা বিনিয়োগ করি এক বছর পর ২ লাখ টাকা হয়ে যাবে। এরকম চিন্তা ভাবনা আপনাকে পাল্টাতে হবে। এটা কোন যাদু নয় যে প্রতিবছর আপনাকে একশ শতাংশ রিটার্ন দেবে, হয়তো দুই এক বছর হয়ে যেতে পারে আপনার কপাল যদি ভালো থাকে। কিন্তু সব সময় এরকম রিটার্ন একরকম অসম্ভব।
আমরা শেয়ার বাজার থেকে ১২ থেকে ১৫% রিটার্ন আশা করতে পারি কম করে। আপনি যদি একটু সময় দিয়ে রিসার্চ করে টাকা বিনিয়োগ করেন তাহলে আপনি ২৫ থেকে ৩০ শতাংশ রিটার্নও আশা করতে পারেন তবে অবশ্যই আপনার চিন্তাভাবনা দীর্ঘমেয়াদী হতে হবে।
৪. কত টাকা দিয়ে শেয়ার মার্কেটে বিনিয়োগ শুরু করা যায়?
আপনি চাইলে ১০০ টাকা দিয়ে শেয়ার বাজারে বা শেয়ার মার্কেটে বিনিয়োগ শুরু করতে পারেন। আবার এক লাখ টাকা দিয়েও শুরু করতে পারেন। অবশ্যই শুরু করা উচিত। আপনি SIP পদ্ধতিতে বিনিয়োগ করতে পারেন এতে আপনার সুবিধা হবে। মাসে ৫০০ টাকা করে নির্দিষ্ট কোন মিউচুয়াল ফান্ডে বিনিয়োগ করতে পারেন বা কোন ইনডেক্স ফান্ডেও বিনিয়োগ করতে পারেন। এতে আপনার লস হওয়ার সম্ভাবনা খুব কম হয়ে যায়।
অবশ্যই বিনিয়োগ করার সময় মাথায় রাখবেন আপনার পোর্টফোলিওতে কম করে ৮/১০ কোম্পানির শেয়ার যেন থাকে যদি আপনি ডাইরেক্ট শেয়ার কেনাবেচা করেন। সব টাকা একটা বা দুটো কোম্পানিতে বিনিয়োগ করবেন না।
৫. কোন কোন ভুলগুলো শেয়ার মার্কেটে করা উচিত নয়?
আপনি যদি একজন প্রথম বিনিয়োগকারী হন তাহলে যে বিষয়গুলো আপনাকে মাথায় রাখতে হবে সেগুলি হল।
১) ঋণ নিয়ে শেয়ার মার্কেটে বিনিয়োগ করবেন না।
২) কারো কথা শুনে শেয়ার কেনাবেচা করবেন না।
3) কেউ যদি গ্যারান্টি দিয়ে বলে XYZ পার্সেন্ট রিটার্ন দেবো তাহলে তাদের থেকে একটু দূরে থাকুন।
৪) ট্রেডিং না জানলে ট্রেডিং করবেন না।
৫) কোন সিদ্ধান্ত খুব তাড়াতাড়ি নেবেন না।
আমেরিকা , ইংল্যান্ডের মতো উন্নত দেশগুলিতে ৪০ থেকে ৫০% মানুষ শেয়ার মার্কেটে বিনিয়োগ করেন সেখানে আমাদের ভারতের ৬-৭% মানুষ শেয়ার মার্কেটে বিনিয়োগ করেন। তাই আমার মনে হয় আমাদের প্রত্যেকের শেয়ার বাজারে বিনিয়োগ করা উচিত।
যদি শেয়ার মার্কেট সম্পর্কে আরো বিস্তারিত জানার আগ্রহ থাকে তাহলে অবশ্যই কমেন্ট করবেন এবং ভাল লাগলে বন্ধুদের সাথে অবশ্যই শেয়ার করবেন। ধন্যবাদ।
শেয়ার বাজার কি?
স্টক মার্কেট এমন একটি জায়গা যেখানে লোকেরা কোম্পানির শেয়ার কিনতে এবং বিক্রি করতে পারে। আপনি যখন একটি কোম্পানির একটি শেয়ার কিনবেন, তখন আপনি মূলত সেই কোম্পানির একটি অংশ কিনছেন।
কেন আমি শেয়ার বাজারে বিনিয়োগ করব?
আপনি স্টক মার্কেটে বিনিয়োগ করতে চাইতে পারেন এমন অনেক কারণ রয়েছে, যার মধ্যে রয়েছে:
দীর্ঘ মেয়াদে আপনার সম্পদ বৃদ্ধি করতে
আপনি বিশ্বাস করেন এমন কোম্পানিতে বিনিয়োগ করুন
মুদ্রাস্ফীতির বিরুদ্ধে হেজ করতে
আপনার বিনিয়োগ পোর্টফোলিও বৈচিত্র্যময় করতে
আমি কিভাবে শেয়ার বাজারে বিনিয়োগ শুরু করতে পারি?
স্টক মার্কেটে বিনিয়োগ শুরু করতে, আপনাকে স্টক ব্রোকারের সাথে একটি ডিম্যাট এবং ট্রেডিং অ্যাকাউন্ট খুলতে হবে। একবার আপনি আপনার অ্যাকাউন্ট খুলে ফেললে, আপনি বিনিয়োগের জন্য কোম্পানিগুলি নিয়ে গবেষণা শুরু করতে পারেন৷ আপনি কোন কোম্পানিতে বিনিয়োগ করতে চান তা ঠিক করে নিলে, আপনি আপনার স্টক ব্রোকারের কাছে অর্ডার দেওয়া শুরু করতে পারেন৷
নতুন বিনিয়োগকারীদের জন্য কিছু টিপস কি?
নতুন বিনিয়োগকারীদের জন্য এখানে কিছু টিপস রয়েছে:
ছোট শুরু করুন
দীর্ঘ মেয়াদে বিনিয়োগ করুন
আপনার পোর্টফোলিও বৈচিত্র্যময়
বাজার সময় করার চেষ্টা করবেন না
নিয়মিত আপনার পোর্টফোলিও রিব্যালেন্স করুন