সাধারণ মানুষ হিসেবে আমাদের কাছে বিনিয়োগের অর্থ হচ্ছে আমরা আমাদের টাকা যেখানে থেকে বৃদ্ধি করতে পারি। আমরা যদি আমাদের টাকা বিনিয়োগ না করি তাহলে আমরা আমাদের টাকার মূল্য দিন দিন কমিয়ে ফেলব। কারণ বর্তমান সময়ে মূল্যবৃদ্ধির হার বা মুদ্রাস্ফীতির হার ৬ থেকে ৭% এর কাছে হয়ে গেছে। তাই আজকে যে জিনিসটার দাম ১০০ টাকা সেই জিনিসটার দাম এক বছর পর হয়ে যাবে ১০৬ থেকে ১০৭ টাকা। কিন্তু আমরা যদি আমাদের টাকা বিনিয়োগ না করি তাহলে আমাদের টাকা কিন্তু ১০০ টাকাটার দাম ১০০ টাকাই থেকে যাবে। তাই আমাদেরকে ১০৬ টাকার জিনিসটা কিনতে গেলে আরও ৬ টাকা পকেট থেকে বের করতে হবে। কিন্তু আমরা যদি আমাদের টাকা কোথাও বিনিয়োগ করি ফিক্স ডিপোজিট, শেয়ার মার্কেট, মিউচুয়াল ফান্ড বা সোনা, যে কোন মাধ্যমেই হোক তাহলে আমরা আমাদের টাকা থেকে কিছুটা টাকা লাভ করতে পারব।
এবার প্রশ্ন হচ্ছে আমরা বিনিয়োগ কোথায় করবো? আমাদের কাছে তো অনেক রাস্তা রয়েছে বিনিয়োগের ফিক্সড ডিপোজিট, শেয়ার বাজার/ মার্কেট, মিউচুয়াল ফান্ড, সোনা।
মানুষের বয়স অনুযায়ী বা কোন মানুষের অর্থনৈতিক অবস্থা অনুযায়ী বিনিয়োগের মাধ্যম যেকোনো জায়গায় হতে পারে।এবং প্রত্যেকটা মানুষের বিনিয়োগের চাহিদাও আলাদা আলাদা হয়। আমি আপনাদের এটা বলবার চেষ্টা করব কোন ধরনের মানুষের কোথায় বিনিয়োগ করলে ভালো হবে।
১৮ থেকে ৩০।
এই বয়সটাতে আমরা চাইলে একটু ঝুঁকি নিতে পারি। কারণ এই বয়সটার পরেও আমাদের প্রচুর সময় থাকবে আরও টাকা রোজগার করার। তাই আমরা এই সময় ঝুঁকি নিতে পারি। তাই ঝুঁকির সাথে সাথে রিটার্ন যেখানে বেশি পাওয়া যাবে এই বয়সটাতে আমরা সেখানে বিনিয়োগ করতে পারি। তাই আমরা এই ১৮ থেকে ৩০ বছরের মধ্যে যারা আছি, আমরা শেয়ারবাজার বা মিউচুয়াল ফান্ডে বিনিয়োগ করতে পারি। এখানে অন্যান্য বিনিয়োগের মাধ্যমে তুলনায় ঝুঁকিও অনেক বেশি এবং তার সাথে সাথে রিটার্ন পাওয়ার সম্ভাবনাও অনেক বেশি। এখানে থেকে আমরা এক বছরে টাকা ডবল ও পেয়ে যেতে পারি আবার এক বছরে আমাদের টাকা হাফও হয়ে যেতে পারে। তাই যেহেতু আমাদের 30 বছর বয়সের পরেও অনেকটা সময় থাকবে ভালো কাজ করে আরো অনেক বেশি টাকা ইনকাম করার। আমরা এই সময়টাই একটু ঝুঁকি নিতে পারি। যদি আমরা একটু ঝুঁকি নিয়ে শেয়ারবাজার বা মিউচুয়াল ফান্ডে বিনিয়োগ করতে পারি তাহলে আমরা একটু শেয়ার বাজার এবং মিউচুয়াল ফান্ড সম্পর্কে জেনে, ভালোভাবে বিনিয়োগ করতে পারলে প্রচুর টাকা অল্প বয়সে রোজগার করে ফেলতে পারি। এতে আমাদের ভবিষ্যৎ অনেক উজ্জ্বল হয়ে যেতে পারে এবং হয়তো আমাদের ভবিষ্যতে কাজ না করেও বহু টাকার মালিক হয়ে যেতে পারি।
৩০ থেকে ৪৫।
এই বয়সটাতে আমাদেরকে একটু ভাবনা চিন্তা করে বিনিয়োগ করতে হবে। কারণ এই বয়সটায় আমাদেরকে অনেক কিছু দায়িত্ব নিতে হয় এবং তার সাথে সাথে আমাদের ঝুঁকি নেওয়ার ক্ষমতাও কমে যায়। তাই আমাদেরকে শেয়ার বাজার এবং মিউচুয়াল ফান্ড ছাড়াও অন্য কোথাও বিনিয়োগ করতে হয়, যেখানে বিনিয়োগ করা সুরক্ষিত বলে মনে হয়। যেমন ফিক্স ডিপোজিট, বন্ড এবং সোনা। এই বয়সে আমরা আমাদের টাকা ভাগ ভাগ করে নিয়ে বিনিয়োগ করতে পারি ৫০% টাকা আমরা শেয়ার বাজার এবং মিউচুয়াল ফান্ডে বিনিয়োগ করতে পারি এবং বাকি ৫০% টাকা আমরা সুরক্ষিত এই সমস্ত বন্ড সোনা এবং ফিক্সড ডিপোজিটে বিনিয়োগ করতে পারি।
৪৫ থেকে ৬০।
এই বয়সটাতে আমাদেরকে আমাদের টাকা অপেক্ষাকৃত সুরক্ষিত কোন জায়গায় বিনিয়োগ করতে হবে। যেখানে রিস্ক বা ঝুঁকি থাকবে খুব কম তাতে রিটার্ন একটু কম হলেও চলবে। কারণ এই বয়সে এসে আমাদের কাজ করার আর ক্ষমতা থাকে না তাই আমাদের টাকা যাতে সুরক্ষিত থাকে এইটা বেশি চিন্তা করতে হয়। এবং সব থেকে সুরক্ষিত যদি বিনিয়োগের কোন জায়গা থাকে সেটা হচ্ছে ফিক্সড ডিপোজিট তাই এই বয়সে ফিক্সড ডিপোজিটে টাকা রাখায় সব থেকে সুরক্ষিত এবং ভালো। কিন্তু শুধুমাত্র ফিক্সড ডিপোজিটে টাকা রাখলেই চলবে না তার সাথে সাথে আমাদের যেহেতু আরো অনেকটা জীবন বাকি থাকে। তাই আমাদের কিছু টাকা সোনা, বন্ড এছাড়াও অল্প কিছু মিউচুয়াল ফান্ডেও টাকা বিনিয়োগ করতে পারি। এখানে কিছুটা রিটার্নের সম্ভাবনা বেশি থাকে।
৬০ এর উপরে।
এই সময় আমার মনে হয় যে কোন মানুষের বিনিয়োগের একটাই রাস্তা হওয়া দরকার সেটা হচ্ছে ফিক্সড ডিপোজিট। এছাড়াও আপনি চাইলে সরকারি বিভিন্ন স্কিম থাকে সেইগুলিতে বিনিয়োগ করুন। অযথা ঝুঁকিপূর্ণ কোন জায়গায় বিনিয়োগ না করাই ভালো। কারণ যখন কাজ করার কোন ক্ষমতা থাকে না মানুষের তখন তাদের সঞ্চয়ের টাকাটা একটা ভালো জায়গায় থাকে সেটাই সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। সেখানে রিটার্ন বেশি হোক বা না হোক।
আজকের এই পোস্টে আমি আপনাদের সাথে বিনিয়োগ সম্পর্কে আমার চিন্তা ভাবনা ভাগ করে নিলাম। এবং আমার মতামত আমি আপনাদের সাথে শেয়ার করলাম। আপনাদের যদি এই বিষয়ে অন্য কোন চিন্তা ভাবনা থাকে তাহলে অবশ্যই আমাকে কমেন্টে জানান আমি অবশ্যই সেই বিষয়ে পোস্ট করব।